সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৪ অপরাহ্ন
সায়লা আফরোজ, ময়মনসিংহ : ত্রিশাল পৌরসভাসহ উপজেলাজুড়ে মাদকের ভয়াবহ বিস্তারের দিনদিন পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠছে। কোনভাবেই ঠেকানো যাচ্ছেনা মাদকের আগ্রাসন। স্পট কেন্দ্রিক মাদকের কারবারের পাশাপাশি অনলাইনেও ইয়াবা কেনা-বেচা চলছে। অনলাইনে অর্ডার করলে মূহুর্তেই ক্রেতার দোড়গোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ সব ধরণের মাদক। মোটর সাইকেলে চেপে ভ্রাম্যমানভাবেও মাদক সরবরাহ করা হচ্ছে।
গত বছর ত্রিশাল থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেনসহ ৪ জনকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে ১০০ গ্রাম হিরোইন জব্দ করা হয়। ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে ৩ মাস থাকার পর জামিনে মুক্ত হয়ে আবারো ২০ জন মাদক কারবারি নিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে উপজেলা বিভিন্ন স্পটে বিক্রি করছে। তাদের এহেন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলেই শুরু হয় জুলুম অত্যাচার । তাই তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে নারাজ। যখনই কেউ মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে তখনই ইমরান হোসেনসহ তার সিন্ডিকেট বিভিন্ন নাটক তৈরি করে ভিন্ন কৌশল অভিলম্বন করে।
ময়মনসিংহ ত্রিশাল পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ড এলাকা হলো মাদক কারবারিদের সদর দপ্তর। সেখান থেকে গোটা উপজেলা সরবরাহ করা হচ্ছে ইয়াবা ও ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট। সেইসাথে ফেনসিডিল ও হেরোইনও কেনা বেচাতো চলছেই।
সেখানে টাকার বিনিময়ে কিশোর, যুবক ও স্কুল শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে ইয়াবা ও ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট। সেইসাথে নানা বয়সীরাও মাদক কিনছে। মাদকের বিষে বিষে নীল হয়ে যাচ্ছে যুব সমাজ। ত্রিশাল সরকারী নজরুল কলেজের পেছনে ২৫ জন মাদক কারবারি সেখানে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করছে। ভোর থেকে গভীররাত পর্যন্ত সেখানে বিভিন্ন পয়েন্টে মাদকের কারবার চলে। যা এখন ওপেন সিক্রেট। মাদক কারবারিদের দাপটে শান্তিপ্রিয় মানুষ অতিষ্ট হয়ে পড়েছেন।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন পৌরসভার কলেজের পুকুর পাড়ে সবচেয়ে বড় মাদক স্পর্ট হলেও পুলিশের অভিযান নেই বললেই চলে। এ ছাড়া মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানও চোখে পড়েনা।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ত্রিশাল উপজেলার বালিপাড়া নদীর পাড়, রেল স্টেশন, কালিবাজার,রামপুর ইউনিয়নের বীররামপুর,ভাটিপাড়া, উজানপাড়া, নওধার ভাংতি, ফাতেমা নগর, পৌরসভা ৫, ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ড এলাকায় ৩৩টি স্পটসহ বিভিন্ন স্থানে মাদকের রমরমা বানিজ্য চলছে। এ সব স্পটে প্রকাশ্যে ইয়াবা, গাঁজা হেরোইন ও ফেনসিডিলের কারবার চললেও শীর্ষ মাদক কারবারিরা ধরা পড়ে না। মাদকের ডিলাররা কক্সবাজার থেকে বাহকের মাধ্যমে ইয়াবা, নেত্রকোনা কলমাকান্দা সীমান্ত থেকে ফেনসিডিল,হেরোইন সংগ্রহ করে এনে ত্রিশাল বিভিন্ন স্পটে খুচরা মাদক বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে থাকে। এরপর খুচরা মাদক কারবারিরা তা মাদক সেবনকারবারি কাছে বিক্রি করছে।
ত্রিশাল পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আজিদা খাতুন জানান, সাবেক এমপি মাদানীর বাসার পেছনে এখন হিরোইন বিক্রির আড্ডা। কোনদিন দেখিনি তারা প্রতিবাদ করতে। শুনেছি তার কোন ছেলে নাকি এর সাথে জড়িত।ত্রিশাল ৮ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইকবাল আজিজ জানান, আমাদের ওয়ার্ড এখন মাদকে সয়লাব। প্রতিদিন মোটরসাইকেলে ১০-১২ জন ছেলে এসে বিক্রি করে।ত্রিশাল থানার ওসি মোঃ কামাল হোসেন বলেন, মাদক নির্মূলে পুলিশ জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। কিন্তু তারপরও আইন শৃখংলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে মাদক কারবারিরা বিভিন্নভাবে মাদক আনছে ত্রিশালে। থানা পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে।